ফুটবলের মাঠে আমরা সব সময়ই একজন খেলোয়াড়কে একটা স্থির ফুটবলকে কিক করে সেটা গতিশীল করে দূরে পাঠিয়ে দিতে দেখেছি। কিক করার সময় যখন ফুটবলটি স্পর্শ করে শুধু সেই মূহুর্তটিতে ফুটবলটিতে বল প্রয়োগ করা হয়, সেই বলের কারণে স্থির ফুটবলটি গতিশীল হয়।
আমরা শুধু এক মূহূর্তের জন্য বল প্রয়োগ না করে দীর্ঘ সময়ের জন্যও বল প্রয়োগ করতে পারি। একটা স্থির ঠেলাগাড়িকে বেশ কিছুক্ষণ ঠেলে তার ভেতরে একটা গতি তৈরি করে ছেড়ে দিতে পারি । ঘর্ষণের কারণে থেমে না যাওয়া পর্যন্ত সেটি বেশ খানিকক্ষণ গড়িয়ে যেতে পারে।
বল প্রয়োগ করে বেগের দিকও পরিবর্তন করা যায়। ক্রিকেট খেলার মাঠে যখন বোলার ব্যাটসম্যানের দিকে একটা ক্রিকেট বল ছুড়ে দেয়, ব্যাটসম্যান তখন ব্যাটের আঘাতে বলটিকে তার ব্যাট দিয়ে আঘাত করে বলটিকে সম্পূর্ণ অন্যদিকে পাঠিয়ে দিতে পারে।
উপরের তিনটি উদাহরণই আমরা দেখেছি অল্প সময় বা বেশি সময়ের জন্য কোনো কিছুর উপর বল প্রয়োগ করে তার বেগের পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা আগের অধ্যায়ে দেখেছি যে বেগে পরিবর্তনের হার হচ্ছে ত্বরণ। কাজেই বলা যেতে পারে কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করা হলে তার ত্বরণ হয়। বস্তুর উপর প্রয়োগ করা বল এবং ত্বরণের সম্পর্কটি হচ্ছে নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র:
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র: বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং যেদিকে বল প্রয়োগ করা হয় ভরবেগের পরিবর্তনও ঘটে সেদিকে।
ধরা যাক কোনো একটা বস্তুর আদি বেগ ছিল u এবং t সময় পর সেই বেগ পরিবর্তিত হয়ে (বেড়ে কিংবা কমে) হয়েছে v , কাজেই ভরবেগের পরিবর্তন হচ্ছে:
কাজেই ভরবেগের পরিবর্তনের হার:
যেহেতু এখানে ধরে নিয়েছি ভরের কোনো পরিবর্তন হয়নি তাই এভাবে লিখতে পারি। তাছাড়া আমরা জানি ত্বরণ হচ্ছে
সুতরাং প্রয়োগ করা বল যদি F হয় তাহলে আমরা নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রকে লিখতে পারি:
কিন্তু আমরা সূত্রটাকে সমানুপাতিকভাবে লিখতে চাই না, সমীকরণ হিসেবে লিখতে চাই! তাহলে একটা সমানুপাতিক ধ্রুব k ব্যবহার করে আমাদের লিখতে হবে
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রটির বেলায় এবারে একটা চমকপ্রদ ব্যাপার ঘটানো সম্ভব। যেহেতু বল বিষয়টাই এর আগে কোথাও ব্যাখ্যা করা হয়নি, (নিউটনের প্রথম সূত্র দিয়ে শুধু সেটার একটা ধারণা দেওয়া হয়েছে) দ্বিতীয় সূত্র দিয়ে এই প্রথম সেটাকে প্রথমবার পরিমাপ করা হবে। তাই ধ্রুবকের একটি মান দিতে হবে। আমরা বলতে পারি নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র প্রয়োগ করার সময় সমানুপাতিক ধ্রুবককে 1 ধরা হলে যেটা পাব সেটাই হচ্ছে বলের পরিমাপ! কী সহজে একটা সমানুপাতিক সম্পর্ককে সমীকরণ বানিয়ে ফেলা যায়।
সুতরাং আমরা নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রটাকে একটা সমীকরণ হিসেবে লিখতে পারি। বল যদি F হয় এবং সমানুপাতিক ধ্রুবককে যদি 1 ধরে নিই তাহলে
এই ছোট এবং সহজ সমীকরণটি যে পদার্থবিজ্ঞানের জগতে কী বিপ্লব করে দিতে পারে সেটি বিশ্বাস করা কঠিন।
বলের একক হচ্ছে নিউটন N
বলের মাত্রা হচ্ছে [F] =
এখানে মনে রাখতে হবে, নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রটি শুধু রৈখিক গতির জন্য সত্যি নয়, এটি যেকোনো গতির জন্য সত্যি। আমরা মাধ্যাকর্ষণ বল সম্পর্কে জেনেছি, নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র ব্যবহার করে মহাকর্ষ বলের কারণে সূর্যকে ঘিরে ঘুরতে থাকা গ্রহদের গতিও ব্যাখ্যা করতে পারব। তবে আমরা এই বইয়ে নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রটি শুধু রৈখিক গতির মাঝে সীমাবদ্ধ রাখব।
একটি বস্তুর উপর যদি বল প্রয়োগ করা হয় তাহলে নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র ব্যবহার করে খুব সহজে তার ত্বরণ বের করা যায়। (বলকে ভর দিয়ে ভাগ করা হলে ত্বরণ বের হয়ে যাবে) ত্বরণ জানা থাকলে গতির সূত্রগুলো ব্যবহার করে তার বেগ কিংবা অতিক্রান্ত দূরত্ব বের করা সম্ভব। অন্যভাবে আমরা বলতে পারি যে যদি আমরা কোনো বস্তুকে গতিশীল দেখি এবং তার স্বরণটুকু বের করতে পারি তাহলে তার ভর জানা থাকলে তার উপর কতটুকু বল প্রয়োগ করা হয়েছে সেটিও বের করা সম্ভব।
এবার আমরা কয়েকটি উদাহরণ দেখি
Read more